রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার পেছনে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’

জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার পেছনে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’

স্বদেশ ডেস্ক:

কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদাকে হত্যার ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নাজমুল হুদার মেয়ে ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) নাহিদ ইজহার খান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেছেন।

সেই মামলার প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে বিএনপি। আজ রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘বস্তুত, নাহিদ ইজহার খান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার বাবার হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠীর একজন ক্রীড়ানক হিসেবে মাত্র। এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। হত্যাকাণ্ডের ৪৮ বছর পর রাজধানীর শেরেবাংলা মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭৫ সালে কর্নেল নাজমুল হুদা রংপুর সেনানিবাসে ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন কর্নেল নাজমুল হুদা। অভ্যুত্থানে সক্রিয় নেতৃত্ব দিতে তিনি ঢাকা আসেন। উল্লেখ্য, খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে তাদের নেতৃত্বে তৎকালীন সেনাপ্রধান (পবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করা হয়। মূলতঃ খালেদ মোশাররফ ও তার সহযোগীদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীর সুযোগে প্রথমত ইতিহাসের নৃশংস জেলহত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংগঠিত অভ্যুত্থানের ফলে সেনাছাউনিতে চরম বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যে সুযোগের অপব্যবহার করে কর্নেল তাহের-ইনু গংয়ের নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও জাসদ গণবাহিনীর নেতৃত্বে পাল্টা-অভ্যুত্থান সংঘটিত করে সেনা বাহিনীতে সেনা অফিসার-সৈনিক বিরোধ সৃষ্টি করে নির্মম সেনা অফিসার হত্যার সুদূরপ্রসারী দেশি-বিদেশি চক্রান্তে শামিল হয়। এর নির্মম শিকার হচ্ছেন খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট  আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতালোভীদের চক্রান্তে সংঘটিত শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড, ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান ও ৭ নভেম্বর জাসদ গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক আদর্শে কর্নেল তাহের-ইনু গংদের নেতৃত্বে পাল্টা সেনা অভ্যুত্থান এবং সৈনিক-অফিসার বিরোধ উসকে দিয়ে নৃশংস সেনা অফিসার হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অস্তিত্ব বিলীন করার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রুখে দিতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, রণাঙ্গনের যোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতির ক্রান্তিলগ্নে সাহসী ভূমিকা অবতীর্ণ হন।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘কর্নেল তাহের-ইনুদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে তিনি সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্রবাহিনীর মাঝে “চেইন অব কমান্ড” প্রতিষ্ঠা করতে নিজের জীবনবাজি রেখে একজন দেশপ্রেমিক সাহসী সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদের লেখা “তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা” গ্রন্থটিতে যার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। অথচ, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত দশম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া কর্নেল হুদাকে হত্যার ঘটনায় তার মেয়ে নাহিদ ইজহার খান ৪৮ বছর পর যে মামলা দায়ের করেছেন, সেখানে সেই হত্যার আদেশদাতা হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করেছেন।’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত রূঢ় সত্যি হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী নিশিরাতের নির্বাচনের বিনাভোটের গঠিত সংসদের একজন সদস্য নাহিদ ইজহার খান সম্ভবত তার নিজের মায়ের লেখা বইটাও পড়ে দেখেননি। যেখানে তার মা নীলুফার হুদার লিখিত গ্রন্থ “কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ”তে (১৩৪ পাতা) স্পষ্টভাবেই লিখে গেছেন, কর্নেল হুদাকে হত্যার সময় কী পরিস্থিতি ছিল। সেখানে উপস্থিত মানুষদের জবানবন্দিই প্রমাণ দেয়, সেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্নেল নওয়াজিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা এবং মেজর হায়দারকে রক্ষা করার।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দায়েরকৃত মামলার বাদী নাহিদ ইজাহার খানের মায়ের লিখিত গ্রন্থের ১৩৪ পাতায় সুস্পষ্টভাবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে কর্নেল তাহেরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে উঠে এসেছে। এতে আরও উঠে এসেছে, কর্নেল তাহেরের নির্দেশে হ্যাকাণ্ডের চারদিন পূর্ব থেকে কর্নেল হুদাসহ অন্যদের ভারতের চর হিসেবে সেনাবাহিনীতে প্রচার করেছিল জাসদ গণবাহিনী। মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরীও একই কথা লিখেছেন বইটির ভূমিকায়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ইতিহাসের নির্মম পরিহাস হচ্ছে, কর্নেল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজহার খান, যিনি ফ্যাসিস্ট ভোটারবিহীন সংসদের এমপি হিসেবে তার পিতার হত্যাকারী জাসদ-গণবাহিনীর উপপ্রধান হাসানুল হক ইনু এবং কর্নেল তাহেরের ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল একই সংসদের এমপি হিসেবে গলা ফাটাচ্ছেন। আর নিজের পিতার হত্যার হুকুমের আসামি করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে, যিনি তার পিতাকে বাঁচানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি, তার মায়ের লেখা গ্রন্থে অভিমানভরে স্বীকার করে নিয়েছেন, তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বস্তুত, নাহিদ ইজহার খান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার পিতার হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন বর্তমান ফ্যসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠীর একজন ক্রীড়ানক হিসেবে মাত্র। এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যার প্রধান কারণ হচ্ছে চলমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন থেকে দেশি-বিদেশি গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে। অন্যথায় পিতার ইতিহাস স্বীকৃত জাসদ-গণবাহিনীর জীবিত কমান্ডার ইনু গংদের বাদ দিয়ে যিনি সৈনিক অফিসার বিরোধ নিরসন করে সেনা অফিসারদের জীবন বাঁচাতে জীবনবাজি রেখে দেশের বিভিন্ন সেনাছাউনিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন, সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হুকুমের আসামি করে নিজের পিতার রক্তের সাথে বেঈমানি করতেন না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবশেষে, বলব বিএনপির নেতৃত্বে দেশের চলমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শেখ হাসিনা ও তার কুশীলবেরা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী সাংসদ কর্নেল হুদার নাহিদ ইজহার খানের মামলা সেই লাগাতার ষড়যন্ত্রের একটি ঘৃণ্য উদাহরণ মাত্র। গণবিচ্ছিন্ন এই দখলদার সরকারের তরফে আগামীতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান থাকবে। বিশেষ করে সরকার পতনের সময়কাল যত এগিয়ে আসবে, শহীদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্রের মাত্রা আরও বাড়বে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তবে আমরা দ্বার্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষদের সাথে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল নস্যাৎ করে দেব, ইনশাআল্লাহ।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877